তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, নিত্যপণ্যের বাজারগুলো করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট হয়ে উঠতে পারে। কারণ করোনা ভীতি থাকা সত্বেও বাজারগুলোতে জনসমাগম থেকেই যাচ্ছে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং নগর বিশেষজ্ঞ ইকবাল হাবিবের মতে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে ও মানুষকে ঘরে রাখতে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করতে হবে অথবা পুরোপুরি লকডাউন করতে হবে।
নিত্যপণ্যের বাজার পুনর্গঠনে অনেক রকমের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিক্রেতাদের প্রতিটি ব্লকে, রাস্তায় ও লেনে নিত্যপণ্য বিক্রি করতে দেয়া যেতে পারে, যাতে মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো বাড়ির সামনেই পেতে পারেন।
ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ঘরে বসে না থেকে এবং সামাজিক দূরত্ব না মেনে সাধারণ মানুষ এখানও নিত্যপণ্যের বাজারসহ নানা স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এটা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে নিত্যপণ্যের বাজার পুনর্গঠন অপরিহার্য। নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে এখনও মানুষের ভিড় লেগে আছে। আবার অনেকে বাড়ি থেকে অপ্রয়োজনে বের হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন এবং ধুমপান করছেন।’
‘এসব এখনই বন্ধ করতে হবে, অন্যথায় আসন্ন সপ্তাহে দেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে একমুখী চলাচল ব্যবস্থা করতে পারে বা বাজারগুলো খোলা জায়গায় স্থানান্তর করতে পারে। ‘তবে এটাও যথেষ্ট নয়, কারণ প্রবেশমুখগুলোতে ভিড় লেগেই থাকবে। এ জন্য আমাদের এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে মানুষকে বাজারে আসতেই না হয়। খাদ্য সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করে আমাদের পুরোপুরি লকডাউনে যেতে হবে।’
‘প্রতিটি আবাসিক এলাকার প্রতিটি ব্লকে খোলা জায়গাগুলোতে অস্থায়ীভাবে নিত্যপণ্যের দোকান বসতে পারে, যেখানে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে পারবেন। আর পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা এসব দোকানগুলো তদারকি করতে পারেন, যাতে ভিড় লেগে না যায়,’ যোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে জনসমাগম এড়াতে সরকারকে বাজার পুনর্গঠন নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার তাৎক্ষণিকভাবে দরিদ্র ও বেকারদের তালিকা তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করতে পারে।
ঢামেক অধ্যক্ষ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের উচিত এখনই কারফিউ ঘোষণা করা। ‘আর কারফিউ আরোপিত হলে সরকারকে প্রয়োজনীয় খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজারগুলো করোনভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য এখন বড় উদ্বেগের কারণ। মানুষ ভয়াবহ পরিণতি না বুঝেই মুদি দোকানগুলোতে ভিড় করছেন।’
তার মতে, নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে জনসমাগম এড়াতে সরকারকে এসব বাজারের পুনর্গঠন নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। প্রতিটি ব্লক, রাস্তা বা লেনগুলোতে অন্তত ১০ জন বিক্রেতা থাকতে পারেন, যারা শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য বেচা-কেনা করবেন। জনসমাগম এড়িয়ে মানুষ সহজেই সেখান থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। পাশাপাশি, মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনী কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
নগর বিশেষজ্ঞ ইকবাল হাবিব বরেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে না পারলে, তাদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ‘তারা যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাড়ির সামনে পায়, তাহলে তারা বাজারে গিয়ে ভিড় করবেন না।’
ডা. জাফরুল্লার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিক্রেতারা যদি প্রত্যেকটা বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্রি করেন, মানুষ বাজারে যাবেন না।
হাবিব বলেন, ‘পরিচয়’ নামে সরকারের ডিজিটাল প্লাটফর্ম রয়েছে, যেখানে প্রত্যেক ভোটারের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। সরকার এখন ‘পরিচয়’ এর মাধ্যমে ডিজিটাল ম্যাপিং করতে পারে এবং অসহায় ও বেকারদের শনাক্ত করে তাদের বিনামূল্যে খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করতে পারে।
এছাড়া, সরকার নতুন একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করতে পারে, যার মাধ্যমে জানতে পারবে, কার কী প্রয়োজন এবং সেগুলো যথাযথভাবে সরবরাহ করা।
পাশাপশি, সরকার অনলাইন শপিংকেও ভালোভাবে প্রচার করতে পারে, যাতে মানুষ অনলাইনে অর্ডার দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য সংগ্রহ করতে পারে। ‘যদি এ পদক্ষেপগুলো নেয়া যায়, তবে মানুষ বাজারে যাবে না।’
যতক্ষণ না মানুষ বিকল্প ব্যবস্থা পাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা নিত্যপণ্যের বাজার যাওয়া বন্ধ করবে না বলেও মনে করে নগর বিশেষজ্ঞ ইকবাল হাবিব।